অধ্যায় ১: কাঁচের দেয়াল
কলকাতার আকাশেও মেঘ জমে। বালিগঞ্জের অভিজাত পাড়ার বহুতল ফ্ল্যাটবাড়ির আটতলার প্রশস্ত কাঁচের জানালার ওপারে ধূসর মেঘের দল অলসভাবে ভেসে বেড়াচ্ছিল। বাইরেটা শান্ত, বৃষ্টি নামার আগের এক থমথমে পরিবেশ। কিন্তু সাতাশ বছরের রিয়ার বুকের ভেতরটা এক নিরন্তর ঝড়ের কেন্দ্র। এই ফ্ল্যাটের দামী আসবাব, দেয়ালে টাঙানো আধুনিক শিল্পকর্ম, নরম কার্পেট—সবকিছুই যেন তার দিকে তাকিয়ে এক নীরব উপহাস করে। এই সব নিখুঁত সজ্জার আড়ালে যে এক বিরাট প্রাণহীন শূন্যতা লুকিয়ে আছে, তা রিয়ার থেকে ভালো আর কে জানে!
অনির্বাণের সাথে তার বিয়ের পাঁচ বছর কেটে গেছে। অনির্বাণ, তার থেকে তিন বছরের বড়, একটি নামী বহুজাতিক কোম্পানির উচ্চপদে কর্মরত। শান্ত, ভদ্র, সফল এবং ভালোবাসায় পরিপূর্ণ একজন পুরুষ। প্রথম তিন বছর ছিল রূপকথার মতো। হাতে হাত রেখে পথচলা, শহরের কোলাহল থেকে দূরে পাহাড়ে বা সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া, রাতের পর রাত জেগে অফুরন্ত গল্প—সবই ছিল। কিন্তু গত দু'বছর ধরে তাদের সেই উজ্জ্বল, রঙিন পৃথিবীতে ধূসর রঙের এক গভীর আস্তরণ পড়েছে।
একটা সন্তান। তাদের ভালোবাসার চিহ্ন। শুধু এটুকুই চেয়েছিল রিয়া। কিন্তু ভাগ্য তাদের সাথে এক নিষ্ঠুর খেলা খেলছে। একের পর এক ডাক্তার, অগণিত পরীক্ষা, রিপোর্টের স্তূপ—শেষ পর্যন্ত কারণটা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে গেল। সমস্যা অনির্বাণের। তার শুক্রাণুর সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে এতটাই কম যে স্বাভাবিক উপায়ে বাবা হওয়া প্রায় অসম্ভব। এই কঠিন সত্যিটা জানার পর থেকেই তাদের সাজানো সম্পর্কের কাঁচের দেয়ালে চিড় ধরেছে।
এখন অনির্বাণের চোখের দিকে তাকালে রিয়া এক গভীর অপরাধবোধ দেখতে পায়, এক পরাজিত পুরুষের নীরব লজ্জা। আর আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজের মধ্যে অনুভব করে এক অপূর্ণ, অতৃপ্ত নারীর যন্ত্রণা। তার সাতাশ বছরের স্বাস্থ্যবতী, উর্বর শরীরটা যেন তাকে প্রতিদিন প্রশ্ন করে—তার এই ভরা যৌবনের সার্থকতা কোথায়?
রাত প্রায় দশটা। কলিং বেলের পরিচিত শব্দে রিয়া বাস্তবে ফিরল। অনির্বাণ ফিরেছে। দরজা খুলতেই একরাশ ক্লান্তি আর শহরের দূষণ গায়ে মেখে ভেতরে ঢুকল অনির্বাণ। ল্যাপটপের ব্যাগটা সোফায় ছুঁড়ে দিয়ে নিজেও শরীরটা এলিয়ে দিল। "আজকে ক্লায়েন্টের সাথে মিটিংটা খুব বাজে গেল," টাইয়ের নট আলগা করতে করতে বলল সে। রিয়া শুধু মাথা নাড়ল। এই কথার কোনো উত্তর হয় না। জিজ্ঞেস করার মতো নতুন কিছু নেই। রোজকার একই গল্প। সে নিঃশব্দে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল খাবার গরম করতে। ডাইনিং টেবিলে দুজনের মাঝখানে যে অস্বস্তিকর নীরবতাটা ঝুলে থাকে, তা যেন ফ্ল্যাটের দামি দেয়ালগুলোর থেকেও বেশি ভারী। খাওয়া শেষ করে যে যার মতো নিজেদের খোলসে ঢুকে পড়ে। অনির্বাণ ল্যাপটপে তার অসমাপ্ত কাজের জগতে ডুব দেয়, আর রিয়া বিছানায় শুয়ে বইয়ের পাতায় চোখ রাখে। কিন্তু তার মন পড়ে থাকে অন্য কোথাও, এক কল্পনার জগতে, যেখানে তার একটা ছোট্ট সংসার আছে, বাচ্চার হাসিতে ঘর ভরে থাকে।
মাঝে মাঝে গভীর রাতে অনির্বাণের ক্লান্ত হাতটা তার শরীরের ওপর দিয়ে এগিয়ে আসে। কিন্তু সেই স্পর্শে কোনো আবেগ থাকে না, থাকে শুধু এক যান্ত্রিক দায়িত্ববোধ, সম্পর্কটাকে টিকিয়ে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা। রিয়াও আজকাল আর সেভাবে সাড়া দেয় না। যে মিলনে সৃষ্টির আনন্দ নেই, প্রাণের স্পন্দন নেই, সেই মিলন তার কাছে এক অর্থহীন শারীরিক ব্যায়ামের মতো মনে হয়। সে অনুভব করে, তার শরীরটা ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাচ্ছে, তার ভেতরের নারীসত্তাটা মরে যাচ্ছে।
এভাবেই চলছিল তাদের জীবন। এক ছাদের নিচে, একই বিছানায় দুজন অপরিচিত মানুষের সহাবস্থান।
এরই মধ্যে একদিন সকালে ফোনটা বেজে উঠল। অনির্বাণের গ্রাম, বর্ধমানের এক প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে। তার বাবা, মহেন্দ্র চৌধুরী ফোন করেছেন। "অনি, আমরা পরশুদিন কলকাতা আসছি। তোর মায়ের শরীরটা একেবারেই ভালো নেই," ফোনের ওপার থেকে ভেসে এল এক গভীর, কর্তৃত্বপূর্ণ গলা, যে গলার স্বর শুনলে আজও অনির্বাণের শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়। অনির্বাণ চমকে গেল। "কী হয়েছে বাবা? মায়ের আবার কী হলো?" "এখানকার ডাক্তার ভালো করে কিছু ধরতে পারছে না। বলেছে, নার্ভের সমস্যা। তাই ভাবলাম, কলকাতার ডাক্তার শর্মিলা সেনকে একবার দেখাই। উনি তো আমাদের পারিবারিক ডাক্তার, তোর দাদুর আমল থেকে দেখছেন। উনি ভালো বুঝবেন।"
ফোনটা রেখে অনির্বাণ রিয়ার দিকে তাকাল। তার চোখে এক মিশ্র অনুভূতি—কর্তব্য এবং এক অজানা অস্বস্তি। মহেন্দ্র চৌধুরী সাধারণ মানুষ নন। গ্রামের প্রভাবশালী জমিদার। বিঘার পর বিঘা জমি, পুকুর, আমবাগান—অগণিত সম্পত্তির মালিক। তার ব্যক্তিত্বের সামনে অনির্বাণ আজও এক কিশোরের মতো গুটিয়ে থাকে।
"বাবা-মা আসছেন," শুকনো গলায় খবরটা দিল অনির্বাণ। রিয়া কোনো উত্তর দিল না। তার সুন্দর কপালে একটা চিন্তার ভাঁজ পড়ল। এই প্রাণহীন, দমবন্ধ করা ফ্ল্যাটে আরও দুজন মানুষের আগমন, বিশেষ করে তার শ্বশুরের উপস্থিতি, তাদের এই ভঙ্গুর, কাঁচের মতো সম্পর্কটাকে কোন দিকে নিয়ে যাবে, সেই আশঙ্কায় তার বুকটা কেঁপে উঠল।
অধ্যায় ২: আগমন ও পর্যবেক্ষণ
দুদিন পর বিকেলে মহেন্দ্র চৌধুরী এবং তার স্ত্রী মালতী দেবী যখন ফ্ল্যাটে এসে পৌঁছলেন, তখন মনে হলো যেন গ্রামের মাটির তাজা গন্ধ শহরের এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, কৃত্রিম সুগন্ধী মাখা ফ্ল্যাটে প্রবেশ করল। মহেন্দ্রবাবুর বয়স ষাটের কোঠায়, কিন্তু তার ঋজু শরীর, চওড়া কাঁধ আর শ্যেনদৃষ্টিতে বয়সের কোনো ছাপ নেই। ধবধবে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিতে তাকে দেখে গ্রামের জমিদার ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না। তার হাঁটাচলা, কথা বলার ভঙ্গিতে এক সহজাত কর্তৃত্ব, যা উপেক্ষা করা কঠিন।
অন্যদিকে মালতী দেবী যেন তার সম্পূর্ণ বিপরীত। রোগা, ফ্যাকাশে শরীর, চোখে একরাশ দুশ্চিন্তা আর ক্লান্তি। ছেলেকে আর বৌমাকে দেখে তার মুখে একটা দুর্বল হাসি ফুটে উঠল। "কেমন আছিস বৌমা?" ক্ষীণ গলায় জিজ্ঞেস করলেন তিনি, তার গলার স্বরে শহরের কোলাহল নেই, আছে গ্রামের পুকুরের জলের মতো স্থিরতা। "ভালো আছি মা। আপনি কেমন আছেন? আপনার শরীর ঠিক আছে তো?" রিয়া ঝুঁকে তার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে করতে বলল। তার মসৃণ হাতটা মালতী দেবীর শীর্ণ পায়ে স্পর্শ করতেই এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো রিয়ার।
মহেন্দ্রবাবু রিয়ার দিকে তাকালেন। তার সেই তীক্ষ্ণ, এক্স-রে মেশিনের মতো দৃষ্টি যেন এক মুহূর্তে রিয়ার ভেতরটা পড়ে নিল। রিয়ার সুন্দর মুখ, দুধে-আলতা গায়ের রঙ, শাড়ির নিচে চাপা থাকা তার সাতাশ বছরের ভরা যৌবনের সুস্পষ্ট আভাস—কোনো কিছুই তার চোখ এড়ালো না। কিন্তু সেই দৃষ্টিতে কোনো লালসা ছিল না, ছিল এক নিখুঁত পর্যবেক্ষকের ঔৎসুক্য, একজন জহুরির চোখে দামী পাথর পরখ করার মতো। তিনি যেন তার বৌমার শারীরিক সৌন্দর্যের গভীরে লুকিয়ে থাকা মানসিক যন্ত্রণাটা এক পলকে পড়ে ফেললেন।
তাদের থাকার ব্যবস্থা হলো ফ্ল্যাটের সবচেয়ে ভালো গেস্ট রুমটায়। রিয়া সারাদিন ধরে তাদের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ছোটাছুটি করল। কিন্তু ফ্ল্যাটের পরিবেশটা কেমন যেন আরও ভারী হয়ে গেল। অনির্বাণ তার বাবার সামনে একদম চুপচাপ, যেন সে বাড়িতে অতিথি। রাতে খাওয়ার টেবিলে সেই থমথমে নীরবতা আরও অসহনীয় হয়ে উঠল। মহেন্দ্রবাবু এবং মালতী দেবী দুজনেই বুঝতে পারছিলেন, তাদের একমাত্র ছেলে আর আদরের বৌমার মধ্যে সবকিছু স্বাভাবিক নেই। তাদের সাজানো সংসারে একটা বড় ফাঁক রয়ে গেছে।
রাতে শোবার আগে মালতী দেবী রিয়াকে কাছে ডাকলেন। তার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, "তোর আর অনির মধ্যে কোনো সমস্যা হয়েছে, বৌমা? সত্যি করে বল।" রিয়া চমকে গেল। শাশুড়ির স্নেহমাখা স্পর্শে তার ভেতরটা গলে গেল। সে নিজেকে আর সামলাতে পারল না। তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। "মা..." ফোঁপাতে ফোঁপাতে সে তার শাশুড়ির কোলে মাথা রাখল। মালতী দেবী তার মাথায় হাত বোলাতে লাগলেন। "কাঁদিস না মা, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি তো আছি।" রিয়া কোনো কথা বলতে পারল না। কিন্তু সে জানত, এই বাড়িতে এখন দুটো অনুসন্ধানী চোখ তাদের ওপর সারাক্ষণ নজর রাখবে, আর তাদের এই গোপন যন্ত্রণা আর গোপন থাকবে না।
অধ্যায় ৩: ডাক্তারের চেম্বার ও গোপন বিধান
ডাক্তার শর্মিলা সেনের চেম্বারটা দক্ষিণ কলকাতার এক শান্ত গলিতে। বছর চল্লিশের এই মহিলা ডাক্তার শুধু সুন্দরীই নন, অত্যন্ত বুদ্ধিমতী এবং বিচক্ষণ। তার চেম্বারে আধুনিকতার ছাপ থাকলেও, তার ব্যবহারে একটা পুরনো দিনের আন্তরিকতা আছে। চৌধুরী পরিবারের সাথে তার সম্পর্ক প্রায় তিন প্রজন্মের। মহেন্দ্রবাবুর বাবার আমল থেকে তিনিই তাদের পারিবারিক ডাক্তার। তাই তিনি শুধু ডাক্তার নন, পরিবারের একজন শুভাকাঙ্ক্ষীও বটে।
মালতী দেবীকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে শর্মিলা সেন তার সেই পরিচিত স্নিগ্ধ হাসি হেসে বললেন, "চিন্তার কিছু নেই চৌধুরী মশাই। কাকিমার নার্ভের সমস্যা হয়েছে। দীর্ঘদিনের অবহেলা আর মানসিক চাপের ফলেই এটা হয়েছে। তবে ওনার যা অবস্থা, তাতে দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন। অন্তত এক বছর ওনাকে কলকাতার আমার তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। প্রতি সপ্তাহে একবার করে আসতে হবে।" মহেন্দ্রবাবু নিশ্চিন্ত হলেন। "যা ভালো বোঝেন, তাই করুন ডাক্তার। চিকিৎসার জন্য যা যা লাগবে, কোনো কিছুর অভাব হবে না। আমি কালই গ্রামের বাড়িতে ফোন করে দিচ্ছি, আমাদের ম্যানেজার সবকিছু সামলে নেবে। আমরা এক বছর এখানেই থাকব।"
অনির্বাণ আর মহেন্দ্রবাবু যখন বাইরে অপেক্ষা করছিলেন, মালতী দেবী শর্মিলাকে একা পেয়ে বললেন, "ডাক্তার, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব? আমার দিব্যি, সত্যি করে বলবে।" শর্মিলা তার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলেন, তিনি আর এড়াতে পারবেন না। "বলুন কাকিমা।" "আমার ছেলে আর বৌমার কি কোনো শারীরিক সমস্যা আছে? কেন বিয়ের এত বছর পরেও ওদের কোল খালি? আমি যে নাতি-নাতনির মুখ দেখার জন্য অধীর হয়ে আছি।"
শর্মিলা এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন। তিনি অনির্বাণের সমস্ত রিপোর্ট দেখেছেন। তিনি সব জানেন। পেশাগত নৈতিকতার কারণে তিনি এতদিন চুপ ছিলেন, কিন্তু মালতী দেবীর কাতর মুখের দিকে তাকিয়ে তার মনটা গলে গেল। তিনি মহেন্দ্রবাবুকে বাইরে অপেক্ষা করতে বলে চেম্বারের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলেন। "কাকিমা, আপনাকে একটা কথা বলছি, কারণ আমি আপনাকে নিজের মায়ের মতো দেখি। কিন্তু কথা দিন, আপনি মাথা ঠান্ডা রাখবেন এবং যা শুনবেন, তা অত্যন্ত গোপন রাখবেন।" মালতী দেবী অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রইলেন, তার বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছিল।
শর্মিলা ধীরে ধীরে অনির্বাণের শারীরিক সমস্যার কথা, তার অক্ষমতার কথা খুলে বললেন। সব শুনে মালতী দেবীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। তার সোনার টুকরো ছেলে, যার জন্য তিনি সবসময় গর্ব করেছেন, তার জীবনে এত বড় একটা অপূর্ণতা! চৌধুরী বংশের প্রদীপ জ্বালানোর মতো কেউ থাকবে না? তার মানে, তাদের এই বিশাল সম্পত্তি, এই জমিদারির কোনো ভবিষ্যৎ নেই? কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি।
"এর কি কোনো চিকিৎসা নেই ডাক্তার?" "চিকিৎসা আছে, কিন্তু সফলতার হার খুবই কম। আর তাতে অনেক সময়, টাকা আর মানসিক যন্ত্রণা জড়িয়ে আছে। আমি অনির্বাণকে সব বুঝিয়ে বলেছি। ওরা হয়তো আই.ভি.এফ-এর কথা ভাবছে।" "কিন্তু তাতেও তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাহলে উপায়? আমার বংশ কি এখানেই শেষ হয়ে যাবে?" শর্মিলা এক মুহূর্ত চুপ করে রইলেন। তারপর মালতী দেবীর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে অত্যন্ত নিচু গলায় বললেন, "একটা উপায় আছে, কাকিমা। কিন্তু সেটা খুবই অস্বাভাবিক। সমাজ হয়তো এটা মেনে নেবে না। কিন্তু চৌধুরী বংশের ভবিষ্যতের জন্য, আপনাদের বিশাল সম্পত্তির একজন যোগ্য উত্তরাধিকারীর জন্য, এটাই হয়তো একমাত্র নিশ্চিত পথ।" "কী উপায়? তুমি খুলে বলো," মালতী দেবী তার হাতটা আরও শক্ত করে চেপে ধরলেন।
শর্মিলা ইতস্তত করে বললেন, "আমি গত সপ্তাহে কাকুরও একটা সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা করিয়েছিলাম। ওনার বয়স হলেও, তিনি এখনও একজন তরতাজা যুবকের মতোই সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সক্ষম। তার শুক্রাণুর সংখ্যা এবং গুণমান অত্যন্ত উন্নত।" মালতী দেবী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তিনি ঠিক বুঝতে পারছিলেন না ডাক্তার কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছেন। শর্মিলা তার কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে ফিসফিস করে বললেন, "যদি চৌধুরী মশাই রাজি হন, এবং আপনারাও যদি চান, তাহলে তিনি... তিনি রিয়ার গর্ভে আপনাদের বংশের প্রদীপ জ্বালাতে পারেন।"
কথাটা শোনার সাথে সাথে মালতী দেবীর সারা শরীর দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হলো। এ কী বলছেন ডাক্তার! শ্বশুর তার নিজের বৌমাকে... নিজের মেয়ের মতো বৌমার সাথে... ছি ছি! এটা তো মহাপাপ! ঘোর অধর্ম! "তুমি এটা কী বলছ ডাক্তার? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে! এটা অধর্ম!" "আমি জানি কাকিমা। আমি জানি এটা শোনা মাত্রই আপনার কেমন লাগছে। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ভাবুন। এটা অধর্ম নয়, এটা বংশ রক্ষার ধর্ম। আপনাদের রক্তই তো আপনাদের বংশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাইরের কোনো ডোনারের থেকে তো নিজের পরিবারের রক্ত অনেক ভালো, তাই না? আমি শুধু একটা সম্ভাবনার কথা বললাম। বাকিটা সম্পূর্ণ আপনাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।"
চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার সময় মালতী দেবীর পা দুটো কাঁপছিল। তার মাথায় ডাক্তারের কথাগুলো যেন হাতুড়ির মতো আঘাত করছিল। পাপ-পুণ্য, ধর্ম-অধর্ম, সামাজিক লজ্জা আর বংশরক্ষার কর্তব্যের এক তীব্র দ্বন্দ্ব তার মনকে তোলপাড় করে দিচ্ছিল। তিনি কি পারবেন এই প্রস্তাব তার স্বামীর কাছে নিয়ে যেতে? আর যদি বা তিনি রাজি হন, তাহলে অনির্বাণ আর রিয়া? তারা কি এই চরম সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারবে?
গাড়িতে ফেরার পথে তিনি একটা কথাও বলতে পারলেন না। শুধু জানালার বাইরে তাকিয়ে রইলেন, কিন্তু তার চোখের সামনে তখন ভাসছিল রিয়ার সুন্দর, স্বাস্থ্যবতী মুখ আর তার স্বামীর বলিষ্ঠ চেহারা। এক নিষিদ্ধ সমীকরণের বীজ তার মনের গভীরে রোপণ হয়ে গেল।
অধ্যায় ৪: নিষিদ্ধ আকর্ষণ ও অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তগুলো
কলকাতার ফ্ল্যাটে দিনগুলো এক অদ্ভুত ছন্দে কাটতে লাগল। মালতী দেবীর চিকিৎসা চলছিল, আর তার সাথে চলছিল চৌধুরী পরিবারের অন্দরের এক নীরব মানসিক টানাপোড়েন। মহেন্দ্রবাবু এবং মালতী দেবীর সতর্ক দৃষ্টির সামনে রিয়া আর অনির্বাণের পক্ষে তাদের সম্পর্কের তিক্ততা লুকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছিল। কিন্তু এই দমবন্ধ করা পরিবেশের মধ্যেই কিছু অপ্রত্যাশিত মুহূর্ত তৈরি হচ্ছিল, যা রিয়ার মনকে এক অজানা, নিষিদ্ধ পথে ঠেলে দিচ্ছিল, আর মহেন্দ্রবাবুর মনের গভীরে ঘুমিয়ে থাকা পুরুষ সত্তাটাকে জাগিয়ে তুলছিল।
প্রথম ঘটনা: ভেজা শরীরের উন্মোচন
এক অলস, মেঘলা দুপুরে, রিয়া লম্বা শাওয়ার নিয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়েছিল। শরীরে শুধু একটা হালকা গোলাপী রঙের তোয়ালে জড়ানো। অনির্বাণ অফিসে, শাশুড়ি তার ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছেন। ফ্ল্যাটটা অস্বাভাবিক রকমের শান্ত। সে ভেবেছিল, এই মুহূর্তে ফ্ল্যাটে সে একা। ভেজা চুল মুছতে মুছতে সে নিজের ঘরের দিকে যাওয়ার জন্য করিডোরে পা রাখতেই হঠাৎ তার শ্বশুরের মুখোমুখি পড়ে গেল। মহেন্দ্রবাবু নিজের ঘর থেকে জল খেতে বেরোচ্ছিলেন। দুজনের কেউই এই আকস্মিক সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুত ছিল না।
রিয়া চমকে সরে দাঁড়াতে গেল। আর ঠিক সেই মুহূর্তে, তার ভেজা শরীর থেকে পিছলে তোয়ালের গিঁটটা সামান্য আলগা হয়ে গেল। এক মুহূর্তের জন্য, তার মসৃণ কাঁধ, বক্ষ বিভাজিকার উপরের অংশ এবং তার সুডৌল, পরিপূর্ণ বুকের পাশের গোলাকার আভাস মহেন্দ্রবাবুর চোখে বিদ্যুতের ঝলকের মতো খেলে গেল। মহেন্দ্রবাবুও অপ্রস্তুত হয়ে দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিলেন। তার চোখে কোনো লালসা ছিল না, ছিল এক আকস্মিক অস্বস্তি এবং বিস্ময়। কিন্তু সেই এক পলকের দৃষ্টি রিয়ার সারা শরীরে যেন এক অজানা শিহরণ বইয়ে দিল। তার মনে হলো, তার শ্বশুরের দৃষ্টি যেন শুধু তার শরীর দেখেনি, তার ভেতরের নারীসত্তার গভীরতাকে স্পর্শ করেছে। সে দ্রুত তোয়ালেটা বুকে চেপে ধরে প্রায় দৌড়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সে নিজের প্রতিবিম্ব দেখল। তার ভেজা শরীর, লজ্জায় আরক্তিম মুখ, কাঁপা ঠোঁট। সে তার শ্বশুরের চোখের সেই দৃষ্টিটা ভুলতে পারছিল না। লজ্জা, ভয় আর এক অদ্ভুত ভালো লাগার মিশ্র অনুভূতিতে তার শরীর কাঁপছিল। এই অনুভূতিটা তার কাছে নতুন, অচেনা, এবং ভয়ঙ্করভাবে আকর্ষণীয়।
দ্বিতীয় ঘটনা: ছাদের উড়ন্ত আঁচল
কয়েকদিন পরের কথা। বিকেলের নরম আলোয় ছাদের এক কোণে কাপড় মেলতে গিয়েছিল রিয়া। তার পরনে ছিল একটা পাতলা হলুদ রঙের সুতির শাড়ি, যা তার দুধে-আলতা গায়ের রঙের সাথে মিশে এক মায়াবী আভা তৈরি করছিল। হঠাৎ দক্ষিণ থেকে এক দমকা হাওয়া এসে তার শাড়ির আঁচলটা উড়িয়ে নিয়ে গেল। কিছু বোঝার আগেই, ভিজে শাড়িটা তার শরীরের সাথে লেপ্টে গিয়ে তার ভরাট বুকের প্রতিটি ভাঁজ, তার কোমর থেকে নিতম্ব পর্যন্ত আকর্ষণীয় বাঁক, এবং তার নাভির গভীরতাকে স্পষ্ট করে তুলল।
ছাদে চেয়ার পেতে বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন মহেন্দ্রবাবু। হাওয়ার ঝাপটায় তারও মনোযোগ ভেঙেছিল। তিনি মুখ তুলতেই দেখলেন সেই দৃশ্য। পড়ন্ত সূর্যের সোনালী আলোয় রিয়ার ভেজা, আবেদনময়ী শরীরটা যেন কোনো প্রাচীন মন্দিরের নিখুঁত ভাস্কর্যের মতো লাগছিল। তার সুগঠিত বুক, যা শাড়ির পাতলা আবরণের নিচে থেকেও নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিল, তার সরু কোমর, এবং তার ভারী, গোলাকার নিতম্ব—সব মিলিয়ে এক জীবন্ত শিল্পকর্ম। মহেন্দ্রবাবুর দৃষ্টি কয়েক মুহূর্তের জন্য সেখানে আটকে গেল। তার বহু বছর আগেকার যৌবনের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল, যখন তিনি গ্রামের মেলায় এমন স্বাস্থ্যবতী, লাস্যময়ী বাঙালি মেয়েদের দেখতেন। রিয়ার শরীরের মধ্যে এক আদিম নারীত্বের প্রকাশ ছিল, যা আজকালকার শহরের মেয়েদের মধ্যে সচরাচর দেখা যায় না।
রিয়া তার শ্বশুরের স্থির দৃষ্টি অনুভব করে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সে দ্রুত আঁচলটা টেনে শরীর ঢাকল, কিন্তু তার এই সচেতনতাই যেন তার সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে দিল। মহেন্দ্রবাবুও সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিয়ে আকাশের দিকে তাকালেন, যেন তিনি কিছুই দেখেননি। কিন্তু দুজনের মধ্যেই সেই অনাকাঙ্ক্ষিত মুহূর্তটা এক অদৃশ্য, unspoken উত্তেজনার জন্ম দিল। রিয়া বুঝতে পারছিল, তার শ্বশুরের চোখে সে শুধু তার 'বৌমা' নয়, একজন সুন্দরী, আকর্ষণীয় নারীও বটে। এই উপলব্ধিটা তাকে একই সাথে লজ্জিত এবং গর্বিত করে তুলল।
তৃতীয় ঘটনা: রান্নাঘরের উষ্ণ স্পর্শ
রান্নাঘরের উপরের তাক থেকে একটা ভারী কাঁচের বয়াম নামাতে গিয়ে রিয়ার বেশ বেগ পেতে হচ্ছিল। একটা ছোট কাঠের টুলের ওপর দাঁড়িয়ে সে যখন পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে হাতটা বাড়িয়েছে, তার শাড়িটা কোমর থেকে কিছুটা সরে গিয়ে মসৃণ পিঠ আর টানটান কোমরের খাঁজ উন্মুক্ত হয়ে পড়েছে। বয়ামটা প্রায় নাগালের বাইরে।
"দাও বৌমা, আমি নামিয়ে দিচ্ছি।" পেছন থেকে মহেন্দ্রবাবুর সেই পরিচিত গম্ভীর গলা শুনে রিয়া চমকে উঠল। সে কিছু বলার বা সরে দাঁড়ানোর আগেই মহেন্দ্রবাবু তার ঠিক পেছনে এসে দাঁড়ালেন। বয়ামটা নামানোর জন্য হাত বাড়াতেই তার চওড়া, শক্তিশালী বুকটা রিয়ার পিঠে আলতো করে স্পর্শ করল।
এক মুহূর্তের জন্য রিয়া জমে গেল। পাথরের মতো কঠিন সেই বুকের স্পর্শে তার সারা শরীরে যেন আগুন ধরে গেল। তার শ্বশুরের শরীরের উষ্ণতা, তার পেশীবহুল কাঠিন্য—এই অনুভূতিটা তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন। অনির্বাণের নরম, শহরের কর্পোরেট জীবনের ছাপ লাগা শরীরের থেকে এটা কতটা আলাদা! মহেন্দ্রবাবুর শরীর থেকে আসা একটা তীব্র পুরুষালি গন্ধ, যা দামি পারফিউম নয়, বরং মাটির কাছাকাছি থাকা একজন পুরুষের নিজস্ব গন্ধ, রিয়ার নাকে প্রবেশ করল এবং তার মাথা ঘুরিয়ে দিল।
"এই নাও," বয়ামটা তার হাতে দিয়ে মহেন্দ্রবাবু এক চুলও দেরি না করে সরে দাঁড়ালেন। তার আচরণে কোনো অস্বাভাবিকতা ছিল না, ছিল শুধু সাহায্য করার স্বাভাবিক তাগিদ। "ধন্যবাদ বাবা," কাঁপা কাঁপা গলায় বলল রিয়া। মহেন্দ্রবাবু কিছু না বলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু রিয়ার শরীরে সেই স্পর্শের অনুভূতিটা অনেকক্ষণ ধরে জ্বলতে থাকল। সে চোখ বন্ধ করে সেই মুহূর্তটা আবার অনুভব করার চেষ্টা করল। সে বুঝতে পারছিল, এই বাড়িতে তার জীবনটা এক নতুন, বিপজ্জনক অথচ আকর্ষণীয় দিকে মোড় নিচ্ছে। এক নিষিদ্ধ অধ্যায়ের সূচনা হয়ে গেছে, যেখান থেকে ফিরে আসার পথ হয়তো আর খোলা থাকবে না। তার অবদমিত নারীসত্তা যেন বহু বছর পর এক শক্তিশালী পুরুষের স্পর্শে জেগে উঠছিল। আর সেই পুরুষটি যে তার নিজের শ্বশুর, এই চিন্তাটা তার উত্তেজনাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছিল
0 Comments